• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

আমি বেঁচে থাকতে কেউ বিনা চিকিৎসায় না খেয়ে মরবে না : প্যানেল মেয়র মতি


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৩০, ২০২০, ১০:৫১ PM / ১০৮
আমি বেঁচে থাকতে কেউ বিনা চিকিৎসায় না খেয়ে মরবে না : প্যানেল মেয়র মতি

নারায়ণগঞ্জ, ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। একই সঙ্গে তিনি এই সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি। নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র এখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতংক বিরাজ করছে। নারায়ণগঞ্জকে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসের হটস্পট বা উপকেন্দ্র। এখান থেকেই প্রথমে রাজধানী ঢাকায় এবং পরে সারা দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। একই সঙ্গে লকডাউন ঘোষনা করায় কর্মহীন হয়ে পরেছেন অধিকাংশ মানুষ। ফলে সমাজের নিন্ম আয়ের মানুষগুলোর মাঝে বিরাজ করছে খাদ্যের জন্য হাহাকার। তাই বর্তমান পরিস্থিতি জানতে গতকাল এই সিটি করপোরেশনের ৬নং ওয়ার্ড সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সাধারন মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো সিটি করপোরেশনের এই ওয়ার্ডে গতকাল পর্যন্ত একজনও আক্রান্ত হননি এই মরনঘাতি ভাইরাসে। এলাকা পরিদর্শন কালে আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় সাধারন মানুষও যথেষ্ঠ সচেতন। কোথাও কোনো মানুষের জটলা নেই। চারিদিকে এক ধরনের সুনসান নিরবতা। এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন মহল্লায় বেশ কিছু বাসিন্দার সাথে এই প্রতিনিধির আলাপ হয়। কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা আমান উল্লা মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমাদের কাউন্সিলর মতি সাহেব রাতদিন আমাদেরকে সতর্ক করছেন। তিনি বার বার বলছেন এইটা একটা ছোঁয়াচে রোগ। তাই আমরা যাতে দূরত্ব বজায় রেখে চলি। তিনি আরো বলেন আমরা পারত পক্ষ্যে ঘর থেকে বের হই না। তবে বাজার সদাই করার জন্য বের হতে হয়। আমাদের এলাকায় এই রোগটি ছড়ায় নাই। আমরা ভালো আছি। জসিম উদ্দিন নামক অপর এক ব্যাক্তির কাছে জানতে চাওয়া হয় এলাকায় ত্রান সামগ্রী কেমন আসছে। তিনি বলেন, আমার নিজের পরিবারের জন্য কোনো ত্রানের প্রয়োজন নেই। আমরা খেয়েপড়ে ভালো আছি ইনশাল্লাহ। তবে যারা গরীব মানুষ তারা ত্রান সামগ্রী পাচ্ছে বলে জেনেছি। আমাদের কাউন্সিলর মতি সাহেব এ ব্যাপারে সতর্ক আছেন। তাকে আমরা নিয়মিত ত্রান সামগ্রী বিতরন করতে দেখছি।
এদিকে এ বিষয়ে আলাপ হয় প্যানেল মেয়র মতিউর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমার এলাকার জনগনকে নিয়ে আমি ভালো আছি। আমার ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত একজনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তিনি বলেন, আমার এলাকার একটি মেয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে কুমিল্লায় তার শশুর বাড়ি থেকে করোনা পজিটিভ নিয়ে এসেছে। আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হোম কোয়ারিন্টেনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। সিটি করপোরেশনের ডাক্তার তার চিকিৎসা করেছেন। আমি তাদের পূরো বাড়ি লকডাউন করে খাবার সরবরাহ করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি। মাননীয় মেয়র মহোদ্বয়ও সব সময় খোঁজ খবর রাখছেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে অত্র এলাকা সম্পূর্ণ মুক্ত রয়েছে। তিনি আরো বলেন আমরা করোনার উপদ্রব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাফন কমিটি গঠন করেছি। গত এক মাসে বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি মৃত্যুবরন করেছেন। কোনোটাই করোনায় মৃত্যু নয়, সবই স্বাভাবিক মৃত্যু। আমরা জানাজা দিয়ে তাদেরকে দাফন করেছি। তিনি বলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে যদি কারো মৃত্যু হয় তাহলে তাকে যতœ সহকারে দাফন করার সকল ব্যাবস্থাই আছে। অন্য ওয়ার্ড থেকে কোনো কাউন্সিলরকে দাওয়াত দিয়ে আনতে হবে না। আমি প্রস্তুত আছি। বেঁচে থাকলে আমি এবং আমার সহকর্মীরাই যথেষ্ঠ।
প্যানেল মেয়র মতির কাছে প্রশ্ন ছিলো মিল কারখানা সব বন্ধ, যানবাহনও চলাচল করছে না। আপনার এলাকার গরীব মানুষকে বাঁচাবেন কি করে? ত্রান সামগ্রী কি পরিমান দিয়েছেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পরিমানে ত্রান সামগ্রী বিতর করছি। সিটি করপোরেশনের মেয়র বার বার ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমিও তাকে আপডেট জানাচ্ছি। সরকারী ত্রানের পাশাপাশি আমি নিজে থেকেও দিচ্ছি। আমার এলাকার একটি মানুষও না খেয়ে নেই এবং থাকবে না ইসশাল্লাহ। তিনি বলেন সিটি করপোরেশনের মাননীয় মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী, স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান দুইজনেই বিপুল পরিমান ত্রান সামগ্রীর ব্যাবস্থা করে পাঠিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ্য থেকে এ পর্যন্ত আমরা ১১ হাজার ৪ শত ৩৩ কেজি চাল বিতরন করেছি। ডাল বিতরন করেছি ৪৮২ কেজি। এছাড়া ১৪০২ জনের একটি তালিকা সিটি করপোরেশনে জমা দেয়া হয়েছে। আরো ত্রান সামগ্রী আসছে। তিনি বলেন অপরদিকে সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানও বিপুল পরিমান ত্রান সামগ্রী পাঠিয়েছেন। সেগুলোও ঘরে ঘরে পৌঁছানো হয়েছে। শামীম ওসমান সাহেবও সব সময় এলাকাবাসীর খোঁজ খবর রাখছেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এবং আমাদের এলাকার কয়েকটি শিল্পকারখানার মালিকগন আমার মাধ্যমে ত্রান সামগ্রী বিতরন করেছে। তাই আমার ওয়ার্ডতো বটেই, পাশের ওয়ার্ড থেকেও অনেকে এসে ত্রান সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আমি সর্বমোট ৩২৩০টি পরিবারের মাঝে মোট ১৬৬৫০ কেজি চাল, ৩২৩০ কেজি আলু, ১৬১৫ কেজি ডাল, ১৬১৫ কেজি লবন, ১৬১৫ কেজি পিয়াজ, ৫২৫ লিটার শরিসার তেল বিতরন করেছি। এছাড়া কাঁচা তরকারী বিতরন করেছি মোট ৭৫০০ কেজি। এসব তরকারীর মাঝে রয়েছে লাউ, কুমড়া, করলা, ঢেরস, টমাটো, কালো বেগুন ও কাঁচা মরিচ। আগামী দিনে ঈদকে সমানে রেখে আমরা আরো বিপুল পরিমান ঈদ সামগ্রী বিতরন করবো ইনশাল্লাহ।
তিনি জনগনের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অযথা আতংকিত হবেন না। আসুন আমরা সকলে মিলে এই মহামারিকে মোকাবেলা করি। আমি জোর গলায় একটি কথা বলতে চাই। আমার এলাকার দায়িত্ব আমার নিজের। আমি বেঁচে থাকতে আমার এলাকার একটি লোকও বিনা চিকিৎসায় বা না খেয়ে মারা যাবে না। তিনি এ সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। (সৌজন্যে : জন্মভূমি)
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১০:৫২পিএম/৩০/৪/২০২০ইং)