• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন

আমরা কি সব মরে গেছি?


প্রকাশের সময় : জুলাই ৬, ২০১৮, ১১:৫৩ AM / ৭০
আমরা কি সব মরে গেছি?

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : চিকিৎসকের অবহেলার কারণে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা আমি নিজেও বুঝি। এ যন্ত্রণা, এ হাহাকার, এ অক্ষমতা নিজেকে কুড়ে কুড়ে খায়। আমাকেও খায়, এখনো। আজীবন খাবে। বিয়ের প্রথম বছরেই সাভাবিকভাবে গর্ভধারন হয়েছিল আমার। কিন্তু অমানুষিক দুঃশ্চিন্তা ও তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে প্রথম সন্তানটি মিস্ ক্যারেজ হয়ে যায় আমার। এদেশের প্রেক্ষাপটে দেরিতে সংসার জীবন শুরু করার কারণে আমার প্রতি চিকিৎসকের তাড়াটাই বেশি ছিল ফের সন্তান নেয়ার জন্য। এদেশে নাকি ৩০ এরপর নারীর সন্তান ধারনের ক্ষমতা দ্রুত গতিতে কমতে থাকে। তাই এর দীর্ঘ আড়াই বছর টানা চিকিৎসা নেয়ার পর ২৯ এর শেষ দিকে এসে ছেলে সন্তানটি গর্ভে এলো। এমন কিছু নেই যা চিকিৎসক বলেছেন আর আমি করিনি। নিজের ভবিষ্যতের জন্য কিছুই সঞ্চয় করতে পারিনি এই চিকিৎসা চালিয়ে যাবার জন্য। যখন যা বলেছে তাই খরচ করেছি। ছেলেটা পৃথিবীতে এলো। কিন্তু চিকিৎসকের প্রতি মুহূর্তের পরামর্শ অনুযায়ী চলার পরেও সময়ের এতটা আগেই ও চলে এলো যে ওকে বুকে ধরে রাখাটা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। মা হবার সেকি যন্ত্রণা… শরীরের ভেতর দিয়ে সে কি যুদ্ধ….। সন্তান প্রসবের তীব্র থেকে তীব্রতরো যন্ত্রণা আমিও সয়েছি, সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবার জন্য আমি অন্যসব মায়েদের মতো মৃত্যুর দোয়ার থেকে যুদ্ধ করে ফিরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য অথবা একজন লোভি চিকিৎসকের ইচ্ছেকৃত অবহেলার জন্য সেই সন্তানকে বুকে নিতে পারিনি। তাকে চিরতরে রেখে আসতে হয়েছে অন্ধকার কবরে। কি ভুল ছিল আমার? মা হবার ফিলিংসটা তো আমার জন্য প্রথম ছিল, তাই কিসের ব্যাথা কেনো ব্যাথা তা তো আমার জানার কথা নয়। প্রতি সপ্তাহ কিংবা ৪/৫ দিন পরপরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগের দিন প্রায় ৭/৮ হাজার টাকার টেস্ট করে ৩/৪ হাজার টাকার ঔষুধ নিয়ে বাসায় ফেরার পর ব্যাথার কারণে ফের যখন চিকিৎসকের কাছে গেলাম, তখনো তিনি আরো এক গাদা টেস্ট দিলেন, কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে প্র্যাকটিক্যালি আমাকে ছুঁয়েও দেখলেন না, দেখলে হয়ত তখনি একটা ব্যবস্থা নেয়া যেতো। ফের টেস্ট করেছি। ফলাফল – ‘আপনারতো কোনো সমস্যাই নেই।’ এই ব্যাথা নিয়েই বাড়ি ফিরলাম। অমানুষিক ব্যাথা নিয়েই কাটছিল সময়গুলো। এর ১/২ দিন পরেই জাহান্নামের আগুনের মতো করে ব্যথা শুরু হলো। ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে। সেখানে দায়িত্বরত সিনিয়র চিকিৎসক বললেন- ”কার চিকিসায় ছিলেন? সেই ডাক্তার কি আপনাকে প্র্যাক্টিক্যালি ট্রিটমেন্ট করেনি? এই বাচ্চাটা তো এখন আর রাখা যাবেনা। টু…………….খুলে গেছে। কিন্তু আপনার ডাক্তার এভাবে…………….সেলাই………………………..করে দিলেই তো বাচ্চাটা টেকানো যেতো। প্রথম যাদের মিস্ ক্যারেজ হয় তাদের পরবর্তী সন্তান টেকাতে হলে এভাবে…………….সেলাই………………………..করে ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যেতে হয়।” আমিতো বিয়ের পর থেকেই ওই একই চিকিৎসকের তত্বাবধানে ছিলাম। তাহলে? যা যাবার তা আমারই গেলো। নরক যন্ত্রণা সয়ে সন্তান প্রসবের পর ওকে অন্ধকার কবরে পাঠালাম। এরপর সেই ক্লিনিকের চিকিৎসক বললেন- নেক্সট সন্তান নিতে চাইলে আপনাকে সাংবাদিকতা ছাড়তে হবে। কেননা এই সন্তান এবোরশনের(ন্যাচারেলি) পর আপনার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। নেক্সট সন্তান গর্ভে ধারন করতে হলে আপনাকে ১০ মাস টোটাল বেড রেস্ট এবং খুবই সিরিয়াস ট্রিটমেন্টের মধ্যদিয়ে যেতে হবে। সাংবাদিকতার নামে দৌড়ঝাপ তো দুরের কথা, চিন্তায়ও এসব আনতে পারবেন না। সেই সাথে কঠিন সেই চিকিৎসা পদ্ধতিও তিনি বলে দিলেন। সেই থেকে আজ প্রায় ৩ বছর শেষের পথে। এখনো নারী হিসেবে পূর্ণ হতে পারিনি। একজন চিকিৎসক যে আমার কত বড় ক্ষতি করেছেন তা কেবলই আমি জানি। কারি কারি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অন্যায় করার পরেও বি.এম.এ’এর ডা. ইকবাল ফয়সালরা বলেন- ওনি সাংবাদিক সন্তানের চিকিৎসা করবেন না। বাহ রে সাংবাদিকতা! আমরা কি সব মরে গেছি? আমরা কি পারিনা এসব চিকিৎসক নামের রাক্ষসদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে? নাকি আপনারা অপেক্ষা করবেন কখন সাংবাদিক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি কিংবা সাংবাদিক রুবেল খানের সন্তানদের মতো আপনাদের সন্তানেরাও চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মরবে তা দেখার জন্য?

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১১:৫২এএম/৬/২০১৮ইং)