আমরণ অনশনে অসহায় নারী সালমা, চান প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা(ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : অক্লান্ত পরিশ্রমের পারিশ্রমিক হিসেবে নিজের পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে গাজীপুরের গাছা ইউনিয়ন পরিষদের ৩৩নং ওয়ার্ডের শিল্পপতি ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী, গ্রীন সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার শাহাদাতের দ্বারা দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৬ নভেম্বর থেকে লাগাতার আমরণ অনশনে বসেছেন উম্মে সালমা নামে এক ভুক্তভোগি নারী। মঙ্গলবার(১৯ নভেম্বর) গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপকালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই নারী।

তিনি জানান- গত এক বছর যাবত পাওনা টাকা ও সঠিক বিচারের আশায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে ঘুরতে পরিশেষে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে যেয়েও আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় বেঁচে যাওয়া সালমা শেষ পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরন অনশনে নেমেছেন।

এসময় সালমা জানান- ‘‘আমি গ্রীন সোয়েটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার শাহাদাতের ফ্যাক্টরিতে কাজ করা বাবদ ৭ লাখ টাকা পাই। যার মধ্যে ৪ লাখ টাকার বিল আমি ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে অফিসে জমা দেই, অবশিষ্ট ৩লাখ টাকার নথিপত্র সে গায়েব করে দেয়। এ বিষয়ে গাছা থানার কর্মকর্তা অবগত রয়েছেন। আমাকে সে টাকা দিবে বলে অফিসে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে এবং সাথে আমার ১৪ বছরের মেয়েকেও অনেক অত্যাচার করে। এক পর্যায়ে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। বর্তমানে ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েটির স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। উপায়ন্ত না পেয়ে আমি গাছা থানায় ২৬/১১/২০১৮ইং তারিখে মামলা রুজু করি, মামলা নং ২৮, ধারা-৪০৬/৪২০/৩০৭/৩২৩/৩৫৪/৩৭৯/১১৪ দ:বি:। মামলাটি বর্তমানে গাজীপুর কোর্টে চলমান। আমি আমার এই নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেই এবং বিষয়টি মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। ফলশ্রুতিতে সে আমার উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং সে আমাকে ও আমার পরিবারের সকল সদস্যকে মেরে ফেলার হুমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি ও আমার পরিবার বর্তমানে খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছি। অধিকন্তু মোকদ্দমাটি কোর্টে চলমান থাকায় আমাকে হাজিরা প্রদান করতে হয়। এই ধারাবাহিকতায় গত ৩০/০১/২০১৯ইং তারিখে ফৌ:কা: বি: ৪৯৫ ধারায় আবেদন করার জন্য কোর্টে আসলে তার বাহিনীর সদস্যরা আমাকে কোর্ট চত্বরে হামলা করে এবং উপস্থিত লোকজন তাদের কাছ থেকে আমাকে উদ্ধার করে। কোর্ট থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুনরায় তারা আমাকে সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ডে পথরোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি আমার নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তীতে এ বিষয়ে গাছা থানা, জি,এমপি-তে ৩১/০১/২০১৯ইং ও ২৯/০৭/২০১৯ইং তারিখে দুইটি সাধারণ ডায়েরী করেছি, যার নং যথাক্রমে ১১৫৯ এবং ১২৬০। বর্তমানে আনোয়ার সাদাত ও তার বাহিনী সদস্য যাদের নাম আমি সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখ করিয়াছি তারা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। যার ফলে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সবাই শংকিত অবস্থায় দিনাতিপাত করছি। যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আনোয়ার শাহাদাত আমার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনাল ক্রাইম এ মামলা করেছি, যার নং ২০১, ধারা-২৫/২২৯।’’

সালমা আরো জানান- ‘‘আনোয়ার শাহাদাত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা প্রভাবশালী বলে তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কোন কথা বলতে পারে না। তারা এলাকায় জোরপুর্বক জায়গা জমি দখল, বিভিন্ন লোকের টাকা আত্মসাৎ করা, ফ্যাক্টারীর শ্রমিকদের মারধর করা, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা, নারীদের উপর অত্যাচার করাসহ নানা অন্যায়মুক কাজ করে থাকে।’’

এদিকে একজন অসহায় নারীর টানা ৪দিন নাওয়া-খাওয়া, পরিবার পরিজন বাদ দিয়ে এভাবে আমরণ অনশনে বসার পরেও মানবাধিকার সংগঠন বা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের কেউ যোগাযোগ না করায় অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন। সচেতন মহলের দাবী, যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন এ অসহায় নারীকে আইনী সহায়তা সহ সঠিক বিচারের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগি সালমা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিযুক্ত আনোয়ার শাহাদাতের যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ভিডিও সংবাদটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

https://www.facebook.com/dhakarn24/videos/1668481233293533/?t=2
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১১:৪৬পিএম/১৯/১১/২০১৯ইং)