• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:২০ অপরাহ্ন

আধুনিক যুগে দাস প্রথার গন্ধ পাই


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮, ১:০৭ PM / ৩০
আধুনিক যুগে দাস প্রথার গন্ধ পাই

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : সুফিয়া, সাহিদা, বাসেরুন কে সফর জেলে পাঠানো হয়েছে। স্ব স্ব এজেন্সি কতৃপক্ষ কিংবা দূতাবাস এদের সহযোগিতায় এগিয়ে না এলে এই ৩জনের শীঘ্রই দেশে ফেরা অনিশ্চিত। অপরদিকে মুক্তিরানী, দিপালী, সেতারা ও ঝুমুর সহ ৫জনকে দাম্মাম অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের গৃহকর্তারা এসে তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তুলে দেয়া হবে তাদের হাতে, এসব নারীদের ইচ্ছা কিংবা তাদের শারীরিক অসুস্থতার উপর কারো দয়া-মায়া নেই। মানুষকে বিক্রি করে দিলে যা হয় আরকি। অবস্থা অনেকটা সেইরকমই ওদের। ভাগ্য ওদের শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরিয়ে আনবে? নাকি সেখানেই ধুকে ধুকে মেরে ফেলবে তা জানা নেই। তবে ওরা সেখানে প্রতিটা মুহুর্ত মৃত্যুর, লাঞ্ছিত হবার, ধর্ষিত হবার, শারীরিক আঘাত সহ্য করার প্রহর গুণে। ওদের এক একজনের জীবনের গল্প নিয়ে এক একটি সিনেমা তৈরি করা যাবে। কি করুণ অবস্থা ওদের, তা বিক্রেতারা ভাবতে চায় না। ক্রেতারাই তো এখন ওদের মালিক। মালিক যা চায়, নিঃশ্বাস অবশিষ্ট থাকা অবধি তাই করতে হয় দাস/দাসীকে। এই আধুনিক যুগেও দাস প্রথার গন্ধ পাই। যেনো আমাদের মা-বোনেরা সাবলম্বী হবার ছলে দাসপ্রথার শিকার হয়েছে। এসব নারীরা আগেই আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, হয়েছেও তাই। প্রায় ৩০ জন নারীর মধ্যে বেশিরভাগকে কোথায় নিয়েছে কেউ জানেনা, বাকি থাকা মাত্র ৭/৮ জনের মাঝে সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থ সুফিয়া ও সেতারাকে দেশে পাঠাবে বলে সেতারার টিকিট করা হয়েছিল গত ১৮ সেপ্টেম্বর। জেট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে এসে দেশের মাটিতে নামার কথা ছিল সেতারার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আজ ২২ তারিখ হয়ে গেলেও তাকে না পাঠিয়ে অন্যদের সাথে দাম্মাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর অসুস্থ সুফিয়াকে পাঠানো হয়েছে সফর জেলে। সেখানে নাকি তাকে ৩ মাস জেল খাটতে হবে। এরপর কবে কখন তাকে দেশে পাঠানো হবে সেটা অনিশ্চিত। সুফিয়ার স্বামী দরিদ্র কৃষক আবুল খায়ের কয়েকদিন ঢাকা এসে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য দৌড়াদৌড়ি করে ফের হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফিরে গেছে। প্রতিটা মুহুর্ত এসব অসহায় নারীদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বীগ্ন হয়ে ফোন করেন, ছুটে আসেন আমার কাছে। কিন্তু আমি কি পারি? #আমি পারি এই সমস্যার কথাগুলো দূতাবাস, এজেন্সি কিংবা দরকারি বিভিন্ন সংস্থায় পৌছে দিতে। #সাংবাদিক হিসেবে লিখতে পারি, #মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পথে নেমে আন্দোলন করতে পারি। কিন্তু এদেরকে ফিরিয়ে আনার শেষ দায়িত্বটুকু তো সরকারের ন্যস্ত দূতাবাস এবং এজেন্সির। তাহলে তাদের এই গাফিলতির কৈফিয়ত নেবে কারা? কেউ নেই। সবাই একচেটিয়া। ২০১৮’র মতো আধুনিক যুগে দাস প্রথার গন্ধ পাই।

লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:০২পিএম/২২/৯/২০১৮ইং)