• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

আজ আ’লীগ নেত্রী নাজমা রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৯, ২০১৯, ১:২৬ PM / ৩৬
আজ আ’লীগ নেত্রী নাজমা রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : আজ ১৯ আগস্ট। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপিকা নাজমা রহমানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

২০১৬ সালের এই দিনে তিনি আমেরিকার আরিজোনায় বড় মেয়ে তানিয়া লুনার বাসায় পরোলোকগমন করেন। ২১ আগস্ট ভোরে সেখানেই তার লাশ দাফন করা হয়।

নাজমা রহমানের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ই মার্চ পাবনার বানোয়ারি গ্রামে। তার ডাক নাম শিরিন। পিতা খন্দকার নাজমুল হকের পরিবারে চার ভাই আর একমাত্র বোন নাজমা রহমান। ৫ বছর বয়সে পিতার চাকরির কারনে নারায়ণগঞ্জ চলে আসায় নারায়ণগঞ্জে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন l

১৯৬৮ সালে শহরের মর্গ্যান উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৭২ সালে একই কলেজ থেকে বিএ এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যোগ দেন। একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক কর্মে জড়িত হন। দেশ স্বাধীনের পর নারায়ণগঞ্জে ‘শাপলা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা হলে তিনি এর সঙ্গে যুক্ত হন।

রাজনীতির হাতেখড়ি পান স্বামী বিশিষ্ট সাংবাদিক মুজিবুর রহমান বাদলের কাছ থেকে। ১৯৬৭ সালে তার সঙ্গে বিয়ে হয় । ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনকালীন ন্যাপের (মোজাফফর) কর্মী হিসেবে ছিলেন সক্রিয়। মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতার আন্দোলনে তার নিত্যদিনের কর্মকান্ড ছিল লক্ষনীয় । মুজিবুর রহমান বাদল সত্তর দশকের মধ্যভাগে দৈনিক সংবাদের চিফ রিপোর্টার ছিলেন। আশির দশকের শেষদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সকাল বার্তা’র সম্পাদক ছিলেন তিনি ।

নাজমা রহমান সত্তর দশকে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। ইত্তেফাক ভবনের ‘সাপ্তাহিক পূর্বাণী’ পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকা শুরু করেন। সকাল বার্তায়ও সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আলী আহমদ চুনকা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নাজমা রহমান ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। পৌর নির্বাচনের পর আলী আহমেদ চুনকাসহ নেতাদের ও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে নাজমা রহমানকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে কমিশনার নির্বাচিত করা হয়।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশব্যাপী যে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতির দানা বাঁধে এর প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড শুরু হয় । এসব কর্মকান্ডের অগ্রভাগে যারা ছিলেন, নাজমা রহমান তাদের অন্যতম। প্রতিটি সভা-সমাবেশে জ্বালাময়ী ভাষণে সংগ্রামের পথকে শক্তিশালী করেন । অধ্যাপিকা নাজমা রহমান জীবনে কোনো রক্তচক্ষু ও কোনো স্বৈরাচারকে পরোয়া করেননি। ১৯৮২ সালে স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন নিত্যদিন মাঠের একজন সক্রিয় নেতা।

১৯৮৬ সালের নির্বাচনে দলীয়ভাবে অধ্যাপিকা নাজমা রহমানকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচনে খুবই দক্ষতার সঙ্গে অধ্যাপিকা নাজমা রহমান লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। বিপুল ভোটে তার নির্বাচিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে ফলাফল ঘোষণা করা হলে দেখা যায়, নাজমা রহমান পরাজিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও তাকে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচনেও তিনি পরাজিত হন।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় অধ্যাপিকা নাজমা রহমানকে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এরপর তিনি ক্রমে দলের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তার আগে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। । কেন্দ্রের রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।

নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনের সময় ঢাকার পান্থপথে আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে অংশ নেন অধ্যাপিকা নাজমা রহমান। ওই মিছিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে বেদম লাঠিচার্জ করে। একটি কাঁদানে গ্যাস সিলিন্ডার তার মাথায় এসে লাগে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যান। মাথার আঘাতটি ছিল বড় ধরনের ইনজুরি। চিকিৎসা নেওয়ার পর ভালো হয়ে যান । কিন্তু মাথার আঘাতটি তাকে মুক্তি দেয়নি। এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঘাতকরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। তার পায়ে গ্রেনেডের কয়েকটি স্পিন্টার আঘাত করে। গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের আঘাত তাকে আরো কাবু করে। কাঁদানে গ্যাস সিলিন্ডারের আঘাতটি তার মস্তিষ্কের ভিতর কুরে কুরে খাচ্ছিল ।

১৯৯৭ সালে স্বামী বিশিষ্ট সাংবাদিক মুজিবুর রহমান বাদল ইন্তেকাল করেন। স্বামীর মৃত্যু, নিজে মস্তিষ্কের রোগে অসুস্থ। পরবর্তীতে ধরা পড়ে ডায়াবেটিক এবং হৃদরোগ। এসব সমস্যা ও জটিলতায় তার রাজনীতির কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকতে পারেননি। বড় কষ্ট , বড় বেদনা, এক বুক জ্বালা নিয়ে তাঁকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে l দলের জন্য , নেত্রীর জন্য এতো কিছু অবদান রাখার পর ও শেষ দিকে তাঁকে সংস্কার বাদী পন্থী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাঁর প্রতি চরম অবমাননা করা হয়েছে যেটা আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি l আমি ছিলাম তাঁর পরিবারেরই একটি অংশ l বড় কষ্ট, অনেক অভিমান নিয়ে বড় অবেলায় চলে গেলেন অধ্যাপিকা নাজমা রহমান। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করছি l ভালো থাকবেন না ফেরার দেশে।

তথ্য : নারায়নগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আহমেদ ফিরোজের ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১:২৬পিএম/১৯/৮/২০১৯ইং)