• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন

অবহেলিতদের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন নারী উদ্যোক্তা সাবিরা নীলা (ভিডিও)


প্রকাশের সময় : মার্চ ৩, ২০১৯, ১২:২৫ PM / ৭৯
অবহেলিতদের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন নারী উদ্যোক্তা সাবিরা নীলা (ভিডিও)

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : যুগে যুগে ঘর-সংসারের বাইরে নারী তার কর্ম জগতে রেখে চলেছে সফলতার স্বাক্ষর। নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে চলেছে তারা। প্রিয় পাঠক, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আমাদের বিশেষ সাক্ষাৎকার বিভাগে আজ এমনই একজন নারীকে আপনাদের সাথে পরিচয় করাবো, যিনি ১৯৯৫ সাল হতে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে যিনি তার দক্ষতা, ধৈর্য্য ও একাগ্রতা দিয়ে সমাজের অসংখ্য অবহেলিত নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।

শুরুটা ১৯৯৮ সালে ‘রং মেলা বুটিকস’ দিয়ে হলেও সাবিরা সুলতানা নীলা ২০১৫ সালের ২ জুলাই থেকে ‘রং মেলা নারী কল্যান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে বর্তমানে প্রায় অর্ধশত নারী কর্মরত রয়েছেন।

শুধুমাত্র সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিতদেরই নয়, কারাগারের বন্দী অপরাধীদেরও বিভিন্ন বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষন দিয়ে আত্মকর্ম সংস্থানের লক্ষ্যে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন এই নারী। যেনো আইনের দণ্ড ভোগ শেষে কারাগারের বাইরের জীবনে গিয়ে তারা আর অপরাধ জগতে না জড়ায়, নিজেরা এসব কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে।

এর স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন এই মহিয়সী নারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার, জয়িতা পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পদক।

এক সময়ের শখের বসে শূন্য হাতে সেলাই মেশিন দিয়ে পথচলা শুরু করা নীলা আজ একজন সফল উদ্যোক্তা।

বাবা মো. আলম ও মা রেহেনা বেগমের সংসারে বড় কন্যা সন্তান নীলা। ১৯৯৫ সালে মো. রাকিব হোসেনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ওই বছরই নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে বি.এ(ডিগ্রি) পাস করেন। এরপরই শুরু হয় তার কিছু একটা করার পথ চলা। চলতে থাকে একদিকে নিজে প্রশিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা, অপরদিকে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত ও দুর্বলদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা। ১৯৯৮ সালে উত্তর চাষাঢ়া ৫১নং বাড়িতে নিজ ঘরেই গড়ে তুলেন ‌’রং মেলা বুটিকস’ নামে একটি আত্মকর্মসংস্থান মূলক প্রতিষ্ঠান। শুরু করেন ব্যবসায়। প্রথমদিকে সামান্য আয় থাকলেও আত্মপ্রত্যয়ে বিভোর নীলা সমাজের অবহেলিত নারীদেরর স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় অনেকট আধা গ্লাস জল পানে মাঠে নামেন। সে উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টায় নিজেকে আরো সক্রিয় করে তুলেন। একে একে প্রশিক্ষিত হন বিভিন্ন প্রশিক্ষণে। তাঁর ধারাবাহিকতায় ২০০১-২০০৩ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সেলাই, ব্লক বাটিক, কম্পিউটার, ফুড প্রসেসিং ও বিউটিফিকেশন পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে বাড়তে থাকে আত্মবিশ্বাস।

সেই দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের আলোকে ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি করারা জন্য ২০০৩ সালে যুব উন্নয়ন থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এবং ওই বছরই ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হন। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি নীলাকে। প্রথমে নারীদের ব্লকবাটিক, ফুড প্রসেসিং ও বিউটিফিকেশনস এর উপর প্রশিক্ষণ দেন। ওই সময় তার বাৎসরিক আয় ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তারপর সাভার ওয়ার্ল্ড ভিশনের আওতায় ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার নারীদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলেন।

তার সংস্থা থেকে সেরাই-কাটিং, ব্লখ বাটিক, এম্বুস, স্প্রে,সিরামিক, ডায়মন্ড সিরামিক, হ্যান্ড এম্বব্রয়ডারি, পুঁথির তৈরি বিভিন্ন শোপিস ব্যাগ, ববনসাই, পটারি, ঝর্না, গ্লাস পেইন্ট, পাটের কাজ, কাপরের ফুল, ওয়ালমেট, বিউটিফিকেশন, চামড়ার দ্রব্যাদি সহ ৩২টি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সাবিলা নীলা।

নিজ সংস্থার বাইরে বর্তমানে তিনি কারুকুঞ্জ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একজন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বিগত ২ বছর যাবত কারাবন্দি নারী-পুরুষদের বিনামূল্যে এসব বিষয়ের উপর বিভিন্ন দিয়ে চলেছেন। যেনো তারা পারিবারিক জীবনে ফিরে গিয়ে পরিবার ও সমাজে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে।


কাজ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে সাবিরা নীলা বলেন, একজন নারীর এগিয়ে যাবার পথে প্রথম বাঁধা তার সমাজ। সমাজের লোকজন যখন নারীদের বাইরের জগতে কাজ করার ব্যাপারে বাঁকা চোখে তাকায়, কানাঘোষা করে, তখন প্রতিটা নারীর উচিত সেইসব বিষয়কে তোয়াক্কা না করে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে সমাজই একদিন সেই নারীকে মূল্যায়ন করবে। যেমনটা হয়েছে আমার জীবনে। যখন শুরু শুরুর দিকে কাজ করতাম, তখন ঘরের বাইরের অনেকের কটুকথার স্বীকার হয়েছি। কিন্তু থেমে থাকিনি। আজকে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেই, সেইসব অনুষ্ঠানের প্রথম নিমন্ত্রন কার্ডগুলো আমি তাদেরকেই আগে দেই। ফলে তারাও এখন চিন্তা করেন যে- নীলা কাজ করেছে বলেই আজ এমন সম্মানের অধিকারী হয়েছে। যেটা তারা আগে ভাবতে পারেনি। সুতরাং আমি বলব যে- সমাজ যাই বলুক না কেনো, নারীদের থেমে থাকলে চলবে না।

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি সামাজিক উন্নয়নে আরো অনেক অসামান্য অবদান রাখতে পারব যদি সরকারি ভাবে সহযোগিতা পাই। সামাজিক সহযোগিতা পেলে অনেক অসাধ্যকে সাধ্য করে তুলতে পারব। বিশেষ করে আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি কোনো পরিত্যাক্ত জায়গা সুবিধা পেলে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই। যেখানে অবহেলিত ও দুস্থ-অসহায় নারীদের গড়ে তুলতে পারবো আত্মনির্ভরশীল হিসেবে। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে তুলতে পারলে পথ শিশুদের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। যারা হেলা অবহেলায় নেশার জগতে তলিয়ে যাচ্ছে। সেইসব শিশূদের দেখাতে চাই আলোর পথ। গড়তে চাই তাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ।

৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে নীলা বলেন, আমি মনে করি আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল একজন নারীর সামাজিক মর্যাদা এবং শুধুমাত্র ঘরের কাজ করা নারীর সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। আর তাই প্রতিটা নারীরই আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। কেননা আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল এবং উপর্জানশীল হলে পরিবার তথা সমাজে নারীর মর্যাদা আরো বেড়ে যায়। তাই প্রতিটা নারীরই ঘরে বসে না থেকে অর্থ উপার্জনে কিছু না কিছু করা উচিত।

ভিডিও সংবাদটি দেখতে ক্লিক করুন-

https://www.youtube.com/watch?v=5ZznZbMUTrk&t=479s

 

 

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১২:১৫পিএম/৩/৩/২০১৯ইং)