• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

অবমাননাকর অবস্থানে বাংলাদেশ


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২০, ২০১৭, ২:২০ PM / ৩০
অবমাননাকর অবস্থানে বাংলাদেশ

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিবেশের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত অবমাননাকর। নতুন ব্যবসা শুরু করা, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া, ব্যাংকঋণ পাওয়া—এসব দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে গতকাল বুধবার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহজীকরণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিষয়টি উঠে এসেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্যই গতকালের সভাটি ডাকা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ওবায়দুল আজম সভায় ব্যবসায় বাণিজ্যের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্র-সংবলিত একটি প্রবন্ধ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। এতে খারাপ অবস্থা থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করা হয়।
সভায় ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনসচিব এস এম গোলাম ফারুক, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ছিলেন পররাষ্ট্র, শিল্প, নৌপরিবহন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এলজিআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেপজা, ইপিবি, বিসিআইসি, চট্টগ্রাম বন্দর, আরজেএসসি, প্রধান আমদানি–রপ্তানি িনয়ন্ত্রকের কার্যালয়, এমসিসিআই, ডিসিসিআই ও বিজিএমইএর প্রতিনিধিরা।
উপস্থাপিত প্রবন্ধে বিশ্বব্যাংকের করা ব্যবসায় বাণিজ্য সহজীকরণ সূচকের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, ‘১৯০টি দেশের মধ্যে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। এ অবস্থানকে সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।’
ব্যবসায়ের পরিবেশের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভুটানের অবস্থানও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো বলে বিশ্বব্যাংকের তথ্য প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০-এর নিচে, অর্থাৎ দুই সংখ্যায় নামিয়ে আনতে হবে, যা একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়ন করার অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজে যেমন দায়িত্ব নিয়েছে, আবার অন্যদেরও পরামর্শ দিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি প্রস্তাবিত কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, সিসিসিআই এবং ইপিবির নন-টেক্সটাইল জিএসপি সনদ দেওয়ার ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনা, রপ্তানিমুখী কৃষি ও কৃষিজাত এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রোডম্যাপ তৈরি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার সময় বর্তমানের ৪০৪ দিন থেকে কমিয়ে মাত্র ২৮ কর্মদিবসে নামিয়ে আনবে যৌথভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগ। রাজউক সব ধরনের নির্মাণকাজের অনুমতি দেবে ৬০ দিনের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও আরজেএসসি ব্যবসা শুরুর সময়টিকে ১৯ দশমিক ৫ থেকে ৭ দিনে নামিয়ে আনবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিনিয়োগে আনুষ্ঠানিকতা কমানোর পাশাপাশি খরচ কমানো এবং ব্যবসাপদ্ধতি সহজ করার বিকল্প নেই। বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সবাইকে দায়িত্বশীল ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) ব্যবসা সহজীকরণের অঙ্গীকারনামায় বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে।
দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিয়েই উদার বিনিয়োগ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার এবং ব্যবসায়ী একে অপরের পরিপূরক। ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে আর ২০৪১ সালের মধ্যে হবে উন্নত বিশ্বের অন্যতম দেশ। এ জন্য দরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সময়, ধাপ ও উৎপাদন খরচ—এ তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো কমাতে পারলে আমাদের ব্যবসা অনেক ওপরে চলে যাবে।’
বিশ্বব্যাংকের করা ব্যবসায়ের পরিবেশ সূচক ২০১৭-এ বাংলাদেশের যে অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাটার সঙ্গে আমি একমত নই। আফ্রিকাসহ বিশ্বের বহু দেশ আছে, যাদের তেমন ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, রপ্তানিও নেই। সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করা হয়।’
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে গেলে অর্থনীতির আকার বাড়াতে হবে। সে কারণে বাড়াতে হবে বিনিয়োগ।
কাজী আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা গেলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার স্বাভাবিকভাবেই দুই অঙ্কে পৌঁছাবে।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০২.১৫পিএম/২০//২০১৭ইং)