• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৮:২০ অপরাহ্ন

হেলিকপ্টারে ঠাকুরগাঁওয়ের যে মুরগির খামার পরিদর্শনে এসেছিলেন বেনজীর


প্রকাশের সময় : জুন ৯, ২০২৪, ১১:০৫ PM / ৪৬
হেলিকপ্টারে ঠাকুরগাঁওয়ের যে মুরগির খামার পরিদর্শনে এসেছিলেন বেনজীর

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা দৌলতপুর গ্রামে ৯০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত পোলট্রি খামার। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ‘নর্থস এগ লিমিটেড’ নামে একটি পোলট্রি খামার। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ৫ বছর আগে এই খামার পরিদর্শনে এসেছিলেন । স্থানীয়রা বলেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠু এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তবে এর স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি।

এই খামার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর ও গৌরীপুর মৌজার কয়েক গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খামারের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তীব্র দুর্গন্ধে ওই দুই মৌজার ৫-৭ গ্রামের বাসিন্দা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, ২০০৯ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে প্রায় ৯০ বিঘা জমির ওপর নর্থস এগ লিমিটেড পোলট্রি খামার স্থাপন করা হয়। দৌলতপুর এলাকায় সরেজমিন গিয়ে, খামারের ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস আলমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এই খামারে তিন লাখের বেশি মুরগি আছে। এসব মুরগির বিষ্ঠা বিক্রি করা হয় ব্যবসায়ী ও মৎস্য খামারিদের কাছে। খামারটির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পেছনে বিষ্ঠা ফেলার ভাগাড়। এর দেয়াল ঘেঁষেই জনবসতি। গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, বিষ্ঠার দুর্গন্ধে টেকা দায়। রোদ উঠলে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। একই গ্রামের খাদেজা বেগম সহ কয়েকজন নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘গন্ধে বমি আসে। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়াদাওয়া করা যায় না! মশা-মাছির উপদ্রবের কারণে রাত-দিন মশারি টাঙিয়ে থাকতে হয়।’ শিউলি আক্তার বলেন, ‘গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়।’ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের বলাকা উদ্যান নামে একটি বিনোদন পার্কের ব্যবস্থাপক হাসান আলী বলেন, ‘মুরগির বিষ্ঠার গন্ধ ও মশা-মাছি-পোকার উপদ্রবের কারণে পার্কে কেউ আসতে চায় না।’ একই চিত্র দেখা যায় গৌরীপুর, বৌরাণী, কুমিল্লাহাড়ী সহ কয়েকটি গ্রামে। দৌলতপুর গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল বলেন, ‘গরিব মানুষের কথা কে শুনব! খামারের গন্ধের কথা বলতে গেলেই বিপদে পড়তে হয়। তার ওপর আবার “বেনজীরের খামার”!’ ঠাকুরগাঁও আড়াই’শ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট তোজাম্মেল হক বলেন, ‘পোলট্রি বর্জ্যের কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। এর থেকে শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এসব খামারসংলগ্ন এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে।’ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা দৌলতপুর গ্রামে ৯০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত পোল্ট্রি খামার। জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলাল বলেন, ‘দুর্গন্ধে দুর্ভোগে পড়েছে দৌলতপুর ও গৌরীপুর মৌজার কয়েক এলাকার মানুষ। আর লাভবান হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যক্তি অত্যন্ত প্রভাবশালী, এদের হাত অনেক লম্বা। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। ভুক্তভোগীরা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে প্রতিকার পাননি। পরে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন। আন্দোলনকারীদের দমন করতে ওই খামারে ছুটে আসেন বেনজীর আহমেদ।’আলাউদ্দিন বলেন, ‘২০১৮ সালে আকাশপথে ঠাকুরগাঁওয়ে আসেন বেনজীর আহমেদ। তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি নেমেছিল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়খোচাবাড়ি এস কে দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। পরে তিনি সড়ক পথে খামারে যান এবং প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখেন। তখন থেকে সবাই এই খামারের নাম বলেন “বেনজীর খামার”।’ তবে খামার ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস আলম দুর্গন্ধ ছড়ানোর কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, গন্ধ যাতে খামারের বাইরে না যায়, সে ব্যবস্থা তাঁদের নেওয়া আছে। বিষ্ঠা থেকে সার উৎপাদন করা হচ্ছে।

এই খামারের মালিক সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ কি না জানতে চাইলে ফেরদৌস আলম বলেন, ‘আমি জানি না। তবে তিনি এই খামারে এসেছিলেন।’

ই খামারের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কি না জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’