• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন

রুপসী বাংলার হেমন্তকাল


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ৮:৩২ PM / ২১৩
রুপসী বাংলার হেমন্তকাল

মাহে আলম আখন : ষড় ঋতুর দেশ রুপসী বাংলা। রুপ বৈচিত্রে ভরপুর ষড় ঋতু।বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতি বিভিন্ন রুপে আসে।প্রতিটি ঋতুই রুপে আলাদা। ষড় ঋতুর সোনার বাংলায় চতুর্থ ঋতু হেমন্ত।কার্তিক-অগ্রহায়ণ এ দুই মাস বাংলাদেশে হেমন্তকাল। এক অপরূপ রূপের ঋতু হেমন্ত।
প্রাকৃতিক মনমাতানো আয়োজনে হেমন্ত পুরোদমে আমেজ ছড়াচ্ছে জীবনানন্দের রূপসী বাংলায়। শরত আর শীতের মোহনায় পবিত্র ভূমিতে গন্ধরাজ শোভিত হিম জায়নামাজ বিছিয়েছে হেমন্ত।
ধীরগতিতে ঊষার আলো ক্রমে উত্তপ্ত হয়।সুদূর দৃষ্টি সীমায় কুয়াচ্ছন্ন ঝাপসা সবুজ কানন।গাছে অর্ধপাকা পল্লব আর অচিরেই পাতা হারানোর আর্তচিৎকার বনে বনে। শরতকে মুছে দিয়ে শীতকে বরণ করতে কী এক আয়োজন পুরো প্রকৃতি জুড়ে। মনে করিয়ে দেয় কবি সুফিয়া কামালের কবিতা হেমন্ত
“সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
কোন পাথারের ওপার থেকে
আনলো ডেকে হেমন্তকে”।
হিম হিম ঝিরিঝিরি বায়ু প্রবাহ শীতের আগমনী বার্তা বয়ে বেড়াচ্ছে। সকালে রবির সুমিষ্ট কিরণ সবুজ নীলাভ বনের শিশির ভেজা পল্লবে পল্লবে ঝলমলে সম্প্রীতি ছড়াচ্ছে।ঘাসের আগায়, ধানের পাতায় শিশির বিন্দু আর সূর্যের কিরণ মিশে মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া জানাচ্ছে। সুপারী আর আমড়ার বাগান নি:সঙ্গ অপেক্ষমান।হালকা কুয়াশামাখা প্রভাত ক্রমে ঝাঝালো রোদে পোড়া দুপুর অবশেষে ক্ষনায়ুর শীতাবেস বিকেলে রূপ নেয়। রাতের শুরুতে ভাপসা গরম আর শেষরাতে মাঝারি শীতে কাথা কম্বলে আশ্রয় নেয় অনেকে।কোথাও কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে আর তীব্র শীতের আগমনী বার্তা দিচ্ছে।শিশির স্নাত পথ, বন, ঘাস ফসল ভরা মাঠ এরই মাঝে চলছে কর্মক্লান্ত মানুষের ছুটে চলা। তবুও বিশ্বকবি তার কবিতায় হেমন্তকে দেখেছেন ভিন্ন চোখে
“আজি এল হেমন্তের দিন
কুহেলীবিলীন, ভূষণবিহীন।”
অর্থাৎ হেমন্তের না আছে শীতের কুয়াশা, না আছে শরতের নীলাকাশ-সাদা মেঘের ভেলা।
হেমন্তে ফুলে ফুলে সুশোভিত ফুলের বাগান। গন্ধরাজ, মল্লিকা,শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক,ছাতিম ও বকফুলের গন্ধে ছেয়ে আছে আশপাশ।ধান,আখ,সবজি-ফল নবান্নের উৎসব ঘরে ঘরে সুখের বন্যা বওয়াচ্ছে।বেড়াতে যাওয়া, নানা ধরনের পিঠা আয়োজন ,খেজুর রস, পাখিদের কলকাকলী ও ছুটে চলার মধ্যেও নবান্নের আমেজ টের পাওয়া যায়।ধান কেটে নিয়ে বাড়ি ফেরা আর আঙ্গীনা ভরা ফসল, নদীর তীরে মনোরম আবহাওয়ায় জেলেদের নির্ভয় নদীযাত্রা মিলে এক অপূর্ব অনুভূতি।
গ্রামীণ আর শহুরে জীবনে হেমন্তে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।কখনো বা দুই প্রান্তে আমেজের সংমিশ্রণ ঘটে।শহরের আত্নীয় স্বজন গ্রামে আসে আবার গ্রাম থেকে শহরে যায় পিঠাপুলি আর হেমন্তের হেমতার কি অপরূপ লেনাদেনা।নাইওর নেয়ার সেই প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য বেশ চোখে পরার মত।নানান পেশার মানুষের মধ্যে পরস্পরের সহোযোগিতা বেশ আনন্দদায়ক।
মেঘ মেঘ, ভারি বৃষ্টি, বজ্রপাত, ঘুমট আবহাওয়া ও বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের ছাপ হেমন্তে স্পষ্ট হচ্ছে।ফুল, ফল ও ফসলে বৈচিত্র্য আসছে।দিনের আলো, রাতের আকাশ ও জীবজগতে পরিবর্তন লক্ষনীয়।যুগে যুগে বাংলার সাহিত্যাঙ্গনে রূপসী বাংলার রূপের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে মহান সৃষ্টিকর্তার কথার সত্যতা মিলে তিনি বলেছেন, “অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না বরকতময়!”। সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য দিকথেকে বাংলার ঋতুতে হেমন্ত এক অনন্য ঋতু।

লেখক –
মাহে আলম আখন
প্রভাষক, নুরুন্নবী চৌধুরী মহাবিদ্যালয়
লালমোহন,ভোলা।