সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : নাহিদ সুলতানা। রান্নার প্রতি নিজের মেধা, দক্ষতা ও সৌখিনতাকে পুঁজি করে যিনি দেশের রন্ধন শিল্পকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের রন্ধনশিল্পের পট পরিবর্তনে পথিকৃত নারী পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবির থেকে শুরু করে কেকা ফেরদৌসী, আলপনা হাবীব, কল্পনা রহমান, কিচেন কুইন লবী রহমানদের মতো দেশসেরা রন্ধনশিল্পীদের পথ অনুস্বরণ করে রন্ধন শৈলীকে শিল্পের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে যে সকল নারী বিগত কয়েক দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম রন্ধনশিল্পী নাহিদ সুলতানা।
প্রিয় দর্শক, আজ আমরা ঢাকারনিউজ এর বিশেষ সাক্ষাৎকার পর্বে সেরা রন্ধনশিল্পী ঢাকার মীরপুরের বাসিন্দা নাহিদ সুলতানার সাথে কথা বলব। জানব তার এগিয়ে চলার গল্প এবং পাশাপাশি তারই হাত ধরে অন্যান্য নারীদেরও এগিয়ে নেয়ার গল্প।
মূলত একজন উদ্যোক্তা হিসেবে রান্না ও শোপিস তৈরি সহ বিভিন্ন আইটেম নিয়ে কাজ করলেও, এক সময় রান্নাকেই একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেন নাহিদ। বর্তমানে তিনি একদিকে নিজে যেমন নতুন নতুন স্বাদের মজাদার সব রান্নার রেসিপি নিয়ে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন দেশি-বিদেশী বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে জাতীয়-আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনগুলোতে, আরেকদিকে নিয়মিত তার অনলাইন এবং অফলাইন ক্লাসে এসে রান্না শিখছে অসংখ্য নারী। নাহিদ সুলতানার কুকিং স্কুল থেকে বেকিং, কুকিং, ডেজার্ট, পিঠা, আচার সহ বিভিন্ন কোর্স করে অসংখ্য নারীরা রন্ধন শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঘরে থেকেই সেসব নারীরা অনলাইনে ফুড বিজনেস করে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করছেন। এমনকি তারই ক্লাসে এসে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে তারই উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখা প্রথম ট্রেইনারকেও।
১৯৮৪ সালের ২৮ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলায় জন্ম তার। বাবা সেনাকর্মকর্তা কাজী মিজানুর রহমান, মা মায়া রহমান একজন সুগৃহীনি। বড় ভাই বিএসসি ইন্জিনিয়ার ও ছোট ভাই চাকুরীজীবি। ৩ ভাই বোনের মাঝে নাহিদ দ্বিতীয়। ২০০০ সালে অধ্যায়নরত অবস্থায় নাহিদ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ব্যবসায়ী কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে। তাদের সংসারে রয়েছে ২ সন্তান। নাহিদ সুলতানা তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট শহীদ রমিজ উদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবং বিয়ের পর স্বামী ও সন্তানদের সহযোগিতায় যথাক্রমে মহানগর ও হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করেন ২০১২ সালে। এরপরের বছরই কিছু একটা করার ভাবনা থেকে রান্নার জগতে পদচারণা শুরু করেন। বিয়ে ও মা হবার পর প্রথমে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তিতে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে চলার এই দীর্ঘপথে পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা সহযোগিতা না থাকলে আজকের নাহিদ সুলতানাকে মানুষ জানত না বলেই মনে করেন তিনি।
রান্নার প্রথম হাতেখড়ি মায়ের কাছ থেকে হলেও বিয়ে পরবর্তি সময়ে শাশুড়ি-ননদের কাছ থেকে নতুন নতুন রেসিপি যেমন শিখেছেন, তেমনি সেসব রেসিপিতে নিজের সৌখিনতা, নিজস্ব গবেষণা যুক্ত করে নতুন কিছু তৈরি করেছেন। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্যাটাগড়িতে প্রশিক্ষণ নিয়ে রন্ধনশিল্পে পেশাদার কাজ শুরু করেন তিনি। যার মধ্যে তার প্রথম কোর্স ছিল ২০১৩ সালে পর্যটন থেকে বেকারি এন্ড পেসট্রি ও ফুড এন্ড বেভারেজ এর উপর। পরবর্তিতে থাইল্যান্ড থেকে ‘থাই কোর্স’ এবং ভারত থেকে ‘কুকিং ও বেকিং’ এর উপর কোর্স করেছেন তিনি।
বর্তমানে তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত একজন এসোসর হিসেবে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন জেলা শহরে গিয়ে নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে স্বনামধন্য ‘লবি রহমান ফাউন্ডেশন’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এছাড়া তার নিজস্ব সংগঠন ‘সাতরং কুকিং সেন্টার’ থেকে ৫০টিরও বেশি কোর্স এর উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন তিনি। এসব কোর্সে সরাসরি ও অনলাইনে নতুন-পুরনো অসংখ্য নারী উদ্যোক্তারা যোগ দিচ্ছেন। বলা যায় একদিকে এই রান্না যেমন তার শখ ও সৌখিনতাকে ছাড়িয়ে তাকে যেমন করেছে আত্মনির্ভরশীল, তেমনি তার হাত ধরেই সাবলম্বী হয়ে চলেছে আরও শত শত নারী।
ইতিমধ্যেই তিনি ‘মিজান মালয়েশিয়ান পাম অয়েল সেরা রন্ধনশিল্পী ২০১৭’ এর সেরা রন্ধনশিল্পী, কুকিং ফাউন্ডেশন পিঠা চ্যাম্পিয়ন সহ অসংখ্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা রাঁধুনী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর পাশাপাশি ভারতের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার রান্নাঘর নামক অনুষ্ঠানে নাহিদ সুলতানাকে অতিথি রন্ধনশিল্পী হিসেবে ডাকা হয়। ভবিষ্যতে নিজের একটি রেস্টুরেন্ট নিয়ে কাজ করতে চান নাহিদ। যেখানে কর্মসংস্থান হবে অসংখ্য নারীদের। থাকবে ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে কাজ করার সুযোগ। সব মিলিয়ে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নাহিদ সুলতানা এখন অসংখ্য নারীর এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।
নাহিদ সুলতানার রান্না বিষয়ক ফেসবুক পেইজ ফলো করতে এবং বিভিন্ন বিষয়ে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন- https://www.facebook.com/groups/2435515053168738
ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আপনার মতামত লিখুন :