• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন

ইজারাদারদের কবলে সাধারণ মানুষ


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২১, ২০২৫, ৮:০৩ PM / ১৩০
ইজারাদারদের কবলে সাধারণ মানুষ

মো. মাসউদ আহমেদ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক বৃদ্ধ অযৌক্তিক খাজনা অনাদায়ে স্পষ্ট দিবালোকে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।ভিডিওতে বৃদ্ধ লোকটিকে অসহায় দেখাচ্ছে। তার চোখে- মুখে অপমান ও হতাশার ছাপ স্পষ্ট যেন বাজারে সে চুরির অপরাধে অপরাধী কিন্তু না। সে অধিকারের জন্য মুখ খুলছে।যতদূর জানা যায় ঘটনাটি ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার যেখানে কিছু দিন আগে রিকশা, অটোরিকশা সহ পরিবহন শ্রমিকরা বে আইনী টাকা তোলার প্রতিবাদে মানব বন্ধন করেছে। তা জনকল্যাণমুলক ও খুবই আশাব্যঞ্জক। উপজেলাটিতে প্রায়ই আধিপত্য, ইজারা, দখল ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মারামারি এমন কি হতাহতের ঘটনা অহরহ ঘটেই চলেছে। তা খুবই হতাশা জনক ও জননিরাপত্তা হীনতার দৃষ্টান্ত। ঘটনাটি পুরো দেশের প্রতিচিত্র যা অতীতেও সীমাতিরিক্ত দেখা গেছে। এ ঘটনাটি এমন সময় ঘটছে যখন দেশে কোন দলীয় সরকার নেই। জনমনের ধারনা আছে এ সময় প্রশাসন প্রভাব মুক্ত হয়ে আইনের শাসন বাস্তবায়নে কাজ করতে পারেন।কিন্তু কোথায়?

***

ইজারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে বয়ে এনেছে এক ভয়াবহ দানবীয় অভিশাপ । বাজার, ঘাট,স্টেশন, পৌরসভা ইত্যাদি ইজারা দেয় সরকার।সরকারের ইজারা মূল্য কত হাত বদল হয়ে কতগুণ বেড়ে যায় তার হদিস স্বয়ং সরকারও কি রাখেন? উদাহরণ স্বরুপ সরকার একশত টাকায় একটি বাজার ইজারা দিল তা কোন জননেতা এনে এক হাজার টাকায় তার বিশ্বস্ত কোন নেতাকে ডাক দিল সে আবার দুই হাজার টাকায় ডাক দিল তার থেকে তিন হাজার টাকায়… এভাবে হাত বদল হয়ে স্থানীয়ভাবে যারা ডাক নেয় তারা মোটা অংকে এ ডাক কিনে নেয়।জানা সত্ত্বেও এত বেশি মূল্যে ডাক নেওয়ার অনেক গুপ্ত উদ্দেশ্য আছে যেমন দলীয় আধিপত্য, ব্যক্তি বা গ্রুপ আধিপত্য ,বাজারে স্থানীয় আধিপত্য বজায় রাখা, উপরস্ত নেতৃবৃন্দের নজরকাড়া ও আর্থিক লাভ ইত্যাদি। উদ্দেশ্য যাই থাকুক আর যত উচ্চমূল্যেই ডাক নেওয়া হউক না কেন তাতে যে লাভ ছাড়া লস হবে না সেই সচেতনতা তাদের আছে। লস না হওয়ার কারণ দুটি এক যারা আদায় করে তারা নানাভাবে প্রভাবশালী আর দুই যাদের থেকে আদায় করা হবে তারা হতদরিদ্র আমজনতা।যা ধার্য্য করা হবে তা দিতেই হবে।না দিয়ে যাওয়ার সাধ্য কার তারাই সেখানকার সরকারের সরকার। এ যেন একচ্ছত্র তালুকদারী।এগুলো কি চলতেই থাকবে?

***

বৃটিশ আমলে জমিদার শ্রেণি জমি ইজারা দিত ধাপে ধাপে এসে জমির খাজনা কৃষকের সক্ষমতার বাইরে চলে যেত যা পরিশোধ করতে কৃষককে তার পুরো ফসল দিতে হত, অনাদায়ে নির্যাতন, জমি নিলাম এক পর্যায়ে দুর্ভিক্ষ ও মানবেতর জীবন কাটাতে হত কৃষককে। বৃটিশরা চলে গেলেও রয়ে গেছে অভিশপ্ত সেই সিস্টেম যা ভাঙ্গতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে এসে সরকারের নির্ধারিত ইজারা বেড়ে যায় প্রভাব ও দাপটের মাত্রানুপাতে।একচ্ছত্র আধিপত্য, গ্রুপ আধিপত্য, দলীয় আধিপত্য ধরে রাখতে স্থানীয় ডাক যে হাকডাক মেরে ফুলে ওঠে তার ভার বইতে হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে। সাধারণত/

বিশেষত ইজারা নেয় অল্পসংখ্যক প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গ্রুপ। আর আদায় করা হয় খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে তাদের সংখ্যা বেশি।এই অল্প সংখ্যক বেশি সংখ্যককে গিলে খাচ্ছে যুগ যুগ ধরে।সব আমলে মুস্টিমেয় কিছু অসাধু লোক, দল ও জনজীবনের গাড়ে অদ্ভুত জীব হয়ে চেপে বসে থাকে তাদের যেন তাড়াবার সাধ্য কারো নেই।অথচ তারা সবার জন্যই ক্ষতিকর।

***

সব আমলেই এমন স্থানীয় রাজাদের রাজত্বে বসবাস করার অভিজ্ঞতা এদেশের সাধারণ জনগণের আছে।এক বাজারে দেখা গেছে শতকরা ২৫ – ৩০ টাকা খাজনা চাওয়ায় বৃদ্ধ লোকটা দিতে অস্বীকার করে তার মুখে চর থাপ্পর দিয়ে যাইচ্চে তা-ই বলে তার বাকি মাল নিয়ে গেছে।আরো ভয়ংকর সব জুলুম চলে আসছে স্পটে স্পটে।যেমন দলীয় পরিচয়ে ভাল ভাল চোখ শোভা সবজি, মাছ,মুরগী, হাস, কবুতর, গরু অন্যান্য পছন্দসই পণ্য ইত্যাদি নামমাত্র মূল্যে বা ফাও নিয়ে যাওয়া।কাউকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা বিরোধী দলের বানিয়ে তার থেকে বেশি খাজনা আদায় বা পুরো মালই নিয়ে নেয়া কিংবা বাজারে না ওঠার আল্টিমেটাম দেওয়া।অপমান করা।টিকেট মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া। রিকশা, অটোরিকশা, অন্যান্য গাড়ি থেকে ইচ্ছামত টাকা ধার্য্য করে তোলা।স্থান ভেদে আরো নানা রকম স্বেচ্ছাচারিতার নজির আছে। এটা কি মগের মুল্লুক? না স্বাধীন দেশ বোঝার উপায় নাই।

***

মোটা অংকে ইজারা নিয়ে তা সাধারণ জনগণ থেকে তোলা হয় তাতে কেবল সাধারণ লোকই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।বেশি খাজনার কারনে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়,ভাড়া বাড়ে,হয়রানি বাড়ে আর কমে কেবল জনজীবনে শান্তি আর স্বস্তি।

***

স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রশাসন থেকে সরকার কেউই দায় এড়াতে পারে না।এমন স্থানে ও সময়েও খাজনা আদায় করা হয় যখন সেখানে খাজনা মওকুফ।এমন গাড়ি থেকেও টাকা তোলে যেটা মওকুফের আওতাভুক্ত। খবর রাখা যাদের কাজ নয় তারাই যখন এত খবর পাচ্ছি যাদের দায়িত্বই মনিটরিং,খবর রাখা তারা কি এ সব জানেন না?না কি দেখেও অদৃশ্য কারণে চুপসে থাকেন?বাজার,ঘাট,রাস্তা,স্টেশন, গাড়িতে টাকা তোলা ইত্যাদি এগুলো কারা? কোথায়? কখন? কিভাবে? বে আইনীভাবে করে থাকে তা সংশ্লিষ্ট মহলের অজানা থাকার কথা নয়।

এখনও যদি এ অবস্থা দেখতে হয় তাহলে জনম দু:খি এ আমজনতার মুক্তি মিলবে কখন, কিভাবে? দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসলে জনগন যে আবার গৌণ ও লাত্থিখাওয়া ফুটবল হয়ে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিহাস আমাদের তাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে। এইভাবে আর কত মার খাবে সাধারণ মানুষ ?

***

এভাবে সাধারণ জনগণকে যেখানে সেখানে হাতিয়ে নিয়ে তারাই আবার জনহিতৈষী সেজে আসবে জনগণের ধারে ধারে? সকলকে এ দানব তাড়াতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। টাকা কামানোর সহজ উপায় হিসেবে পেশা হিসেবে এসব উপায় অবলম্বন রাজনীতির এমন চিরাচরিত নিয়ম পাল্টাতে হবে।আমজনতার মুক্তি তবেই সম্ভব। সুন্দর সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তখনই হাসবে সত্যিকার স্বর্গীয় সুখের হাসি।

লেখক – মো মাসউদ আহমেদ
শিক্ষক ও কলামিস্ট